top of page
Writer's pictureKuakata UpoKul Tourism &Travels

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি

Updated: Oct 26, 2023



কুয়াকাটা মনোরম সমুদ্র সৈকতের জন্য পরিচিত একটি শহর। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি হিসেবে বিশ্বে এর ব্যাপক সুনাম রয়েছে বলে বছরে এখানে লাখ লাখ দেশী বিদেশি পর্যটকের সমাগম হয়। এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত ও মৎস বন্দর। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩ কিলোমিটার চওড়া একটি বালুকাময় বিতৃত সবুজের সমারহে বেষ্টিত এলাকা। এর পূর্বে রয়েছে সমুদ্রে জেগে ওঠা বিভিন্ন দ্বীপ, ম্যানগ্রোভ ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে সুন্দরবনের শুরু, সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ। এছাড়াও রয়েছে কুয়াকাটার প্রাচীন নিদর্শন সহ রাখাইন সম্প্রদায়ের নানান কৃষ্টিকালচার। এখানে স্থলপথে ভ্রমনের জন্যও রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট।


উপকূলীয় পর্যটন কুয়াকাটা থেকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ।।



টেংরাগিরি বন্যপ্রানী অভয়ারন্য / সুন্দরবনের পুর্বাংশঃ

ফাতরার বনঃ কুয়াকাটা থেকে আনুঃ ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ফাতরার বন থেকেই শুরু সুন্দরবনের সীমানা। সেখানে যেতে চাইলে সৈকত থেকে ট্রলার বা স্পীট বোটে ভাড়া করে যেতে হবে। আর এই ভ্রমনটি হবে আপনার জন্য একটি রোমাঞ্চকর ভ্রমণ।

কখনো সমুদ্র ও কখনো নদীপথে একঘন্টা ট্রলার যোগে আপনারা সিঙ্গেল বা রিজার্ভের মাধ্যমে পৌছে যাবেন ফাতরার বন। অথবা স্পীড বোটের মাধ্যমেও সেখানে যেতে পারেন মাত্র ১৫মিনিট সময়ে। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা খুব একটা নেই। আর এখানে স্থানীয় লোকজনও খুব একটা দেখা যায় না। ফাতরার বনে নামলে আপনার চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল লম্বা বনাঞ্চল। অনেকের মনে হতে পারে আপনি সুন্দরবনে এসে নেমেছেন। এখানে একটি বাংলো আছে আর পাশেই রয়েছে একটি সুন্দর মিঠা পানির পুকুর। এখানেনে তেমন দৃশ্যমান বন্যপ্রানীর বিচরণ নেই বললেই চলে। তবে পাখির কুহুতান হতে আপনি বঞ্চিত হবেন না এটা নিশ্চিত বলা যায়। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা জোরদারে বর্তমানে প্রায় সারা বছরই এই স্পটে পর্যটকরা ভ্রমন করছেন। এই বনে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা বা এর বেশী। বনের গভীরে চলে গেছে নদী। আপনি ইচ্ছিা করলে ট্রলার নিয়ে আরো গহীনে যেতে পারেন। তাতে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি কিছুটা হলেও বাড়বে। গহীনের নিস্তব্দতা আপনাকে আরো আপ্লুত করবে।



টেংরাগিরি বন্যপ্রানী অভয়ারন্য / সুন্দরবনের পুর্বাংশঃ

সোনাকাটা/ফকিরহাটঃ কুয়াকাটা থেকে আনুঃ ২৭ কিলোমিটার পশ্চিমে বনবিভাগ আমতলী রেঞ্জের টেংরাগিরি তালতলী উপজেলার (সখিনা) বিটের এ জায়গাটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এর নাম দেয় “টেংরাগিরি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য” ও ইকোপার্ক।



এ বনের পূর্ব দিকে রয়েছে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন, উত্তর পাশে রাখাইনদের বেশ কিছু বসতি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রপথে দেরঘন্টা সীবোট যোগে আপনারা সিঙ্গেল বা রিজার্ভের মাধ্যমে পৌছে যাবেন। অথবা স্পীড বোটের মাধ্যমেও সেখানে যেতে পারেন মাত্র ২৫ মিনিট সময়ে। স্থানীয়রা কেউ নিদ্রা সখিনা আবার কেউ চিনেন ফকিরহাট নামে।

একদিকে বিস্তীর্ণ সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহের চমত্কার একটি স্থান। হরিণঘাটায় একদিকে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য, তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বণ্যপ্রাণীরও। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ বন নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ। কেওড়া, গরাণ, গেওয়া, ওড়া প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ বনের প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়া বনে দেখা মেলে চিত্রা হরিণ, বানর, বন বিড়াল, বন্যশুকরসহ নানান বন্যপ্রাণীর। এ ছাড়া নানা প্রজাতির পাখি আর গুঁইসাপসহ একাধিক প্রজাতির সাপেরও আবাসস্থল এই বন। তবে হরিণঘাটায় অবস্থিত এই বনের সবেচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি হলো বনের ভেতর সর্পিলাকারে ছড়িয়ে থাকা একাধিক খাল। জোয়ারের সময় যখন খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ।শকুনের নিরাপদ এলাকা-২ তফসিল অনুসারে টেংরাগিরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

এখানে থাকার জন্য তেমন কোনো হোটেল - রিসোর্ট গড়ে ওঠেনি। বন রক্ষীদের জন্য একটি মাত্র বাংলো রয়েছে।

আপনাদের থাকার জন্য নিরাপদ জায়গা হবে কুয়াকাটা অথবা বরগুনার কোনো এক আবাসিক হোটেলের কক্ষে। _________________________________________________________________



হরিনঘাটা ইকোপার্কঃ

কুয়াকাটা থেকে আনুঃ ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হরিনঘাটা ইকোপার্ক। এটি সুন্দরবনের একটি অংশ। সেখানে যেতে চাইলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে লাইফবোট বা স্পীট বোটযোগে রিজার্ভ ভাড়া করে যেতে হবে। সীবোটে যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা, স্পীড বোটযোগে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ ঘন্টা।


বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে হরিনঘাটা পর্যটন কেন্দ্র যা সুন্দরবনের অংশ। হরিন, বানর,পাখির,আর সবুজ পাতার সানাইয়ে সারাক্ষণ মুখর থাকে হরিনঘাটা বনাঞ্চল। এ বনে কোন বাঘ নেই। বঙ্গোপসাগরের মোহনায়,পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর – এই তিন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই বনাঞ্চল।



ঘুরে আসুন প্রকৃতির কোলে, যেখানে মানুষের পদচারণা খুব একটা নেই। একই সাথে যেখানে নদী, বন আর সাগরের দেখা মিলবে। পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে হরিনঘাটা পর্যটন কেন্দ্র। এটা সুন্দরবনেরও অংশ। ভাগ্যে থাকলে দেখা পেতে পারেন হরিনের। তবে বানর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে হরিনঘাটায়। পর্যটন কেন্দ্রে ঢোকার সাথে সাথেই খালের উপর ব্রিজ পড়বে, সেটি পার হলেই ওয়াকওয়ে। এটি দিয়ে বনের ভিতর প্রায় এককিলোমিটার গভীরে যেতে পারবেন অনায়াসে। হাটা শেষ হলেই সেখানে পড়বে সাগরের মোহনা। আপনি বনে না হাটতে চাইলেই ব্রিজের কাছেই কয়েকটি ট্রলার থাকে, তাদের বললেই মোহনায় নিয়ে যাবে। ওই মোহনাটির একটা বিশেষত্বও আছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ পাওয়া যায় এই মোহনায়। পায়রা, বিষখালি, বলেশ্বর নদীর সাথে একই জায়গায় মিলেছে বঙ্গোপসাগর। এই মোহনায় বিকেলটা কাটালে সেটা জীবনের সুন্দর আর মোহনীয় বিকেল হবেই। এই মোহনার কোল ঘেষে আছে বন। মাঝে মাঝে মাছ ধরার ট্রলার। আর বনের প্রান্তর ঘেষে শত শত গরুর পাল। আর নদীগুলোর ধার দিয়ে আছে ঝাউবন। মোহনাটির সবচেয়ে বড় লালদিয়ার চর। কাছাকাছি আছে ফাতরার চর ও পদ্দার পার। এসব ভ্রমন শেষে ট্রলারযোগে কুয়াকাটায় ফিরে আসবেন। তবে সুন্দরবনের দুবলার চরও হরিনঘাটার বেশ কাছে।



লালদিয়ার বনঃ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে লালদিয়ার বন। সুন্দরবনের হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বন পার হয়ে গেলে পাওয়া যায় এই লালদিয়ার বন। তবে কুয়াকাটা থেকে সমুদ্রপথে হরিনঘাটা ইকোপার্কের আগে প্রথমেই এই বন আপনাদের সামনে পরবে। কুয়াকাটা থেকে সীবোটে যেতে প্রায় তিন ঘন্টা ও স্পীড বোটে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগবে। কুয়াকাটা থেকে এসব নৌযান অবশ্যই রিজার্ভ করে যেতে হবে।



এ বনের পূর্বে বিশখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী । দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে । বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই।

এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কুহুতান ও অতিথি পাখির অবাধ বিচরন এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে যেকেউই বিমোহিত এবং আবারো ফিরে আসবেন। এখানে কখনো সাগরের নোনা জল কখনো আধানোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুড়ে বেড়ায় সৈকতের বেলাভুমিতে। নৈসর্গিক এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভুতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।

লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুটকি পল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ মানুষের খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে।


যেভাবে যাবেন ও থাকবেন লালদিয়ার বন - হরিঘাটা ইকোপার্কঃ

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে কুয়াকাটার উদ্দ্যেশ্যে পরিবহনের বাস যোগে আসতে পারেন আথবা ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই কুয়াকাটা ও বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। এসব বাসের মধ্যে - সাকুরা, হানিফ, শ্যামলী, গ্রীন লাইন সহ প্রায় অর্ধশত পরিবহন গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে ছেরে আসে। সকালে ও রাতে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সাকুরা পরিবহন গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করে।

আপনি চাইলে নদী পথেও কুয়াকাটা ও বরগুনা যেতে পারেন। কুয়াকাটা যেতে চাইলে আপনি কলাপারা একটি লঞ্চ যায় সেটি করে যেতে পারেন অথবা আমতলী পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বাস, থ্রী হুইলার, সিএনজি বা মটর সাইকেল যোগে কুয়াকাটায় পৌছাতে পারবেন। অনেকের কাছেই বাস ভ্রমণের চেয়ে লঞ্চই আরামদায়ক ভ্রমণ।

বরগুনা হতে বাসযোগে পাথরঘাটা যাওয়ার পর মোটরসাইকেলে অতি সহজেই লালদিয়া ও হরিনঘাটা বনে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায় এসব বনে। পিরোজপুর হয়েও পাথরঘাটায় যাওয়া যায়। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া বন ধরে হেঁটে গেলে সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে ঘণ্টা দুয়েক। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হতে পারে।

কোথায় থাকবেন?

বরগুনার পাথরঘাটা ও আমতলী উপজেলায় ভাল মানের তেমন কোন হোটেল নেই। সেক্ষেত্রে থাকতে হবে বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এ ছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

বরগুনায় আছে- রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, খামারবাড়ী রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস, এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার, গণপূর্ত বিভাগ রেস্ট হাউস, সিইআরপি রেস্ট হাউস। বরগুনার হোটেলগুলোর মধ্যে- হোটেল তাজবিন (০৪৪৮-৬২৫০৩), বরগুনা রেস্ট হাউস (০১৭১৮-৫৮৮৮৫৬), হোটেল আলম (০৪৪৮-৬২২৩৪), হোটেল বসুন্ধরা (০৭১২৬-৪৫৩০০৭), হোটেল মৌমিতা (০৪৪৮-৬২৮৪২), হোটেল ফাল্গুনী (০৪৪৮-৬২৭৩৩)।

এদিকে লালদিয়া থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব খুবই কম। আপনি চাইলে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে লালদিয়া ও হরিনঘাটা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যেতে পারেন। আপনি ইচ্ছে করলে কুয়াকাটায়ও অভিজাত সেভেন-থ্রী স্টার মানের হোটেলে থাকতে পারেন। এতে আপনার এক যাত্রায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত সহ সুবিশাল বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় পর্যটনের প্রায় অধিকাংশ স্পট দেখা হয়ে যাবে।


কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবনে দুইদিন এক রাতের জন্য ভ্রমন করে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ৭-১০দিন পূর্বেই আমাদেকে যানাতে হবে। বুকিংয়ের জন্য আমরা আপনাদের সর্বাত্বক সহযোগীতা করবো।



Coming Soon...

18 views1 comment

1 Comment




Like
bottom of page